10 May 2024, 04:22 am

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পূর্ণ বিবরণ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

 অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ গণভবনে তাঁর সাম্প্রতিক ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ার্ক সামিট এবং কাতার ইকনোমিক ফোরামে অংশগ্রহণ সম্পর্কিত প্রেস ব্রিফিং-এ ভাষণ দেন।
তাঁর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ নীচে দেয়া হলো-
“প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
সহকর্মীবৃন্দ
আসসালামু আলাইকুম!
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর মহাপরিচালকের আমন্ত্রণে ‘ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ার্ক সামিট: সোশ্যাল জাস্টিস ফর অল’-এ যোগ দিতে আমি ১৩ থেকে ১৬ জুন ২০২৩ জেনেভা সফর করি। এ শীর্ষ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বব্যাপী সামাজিক ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে জোরালো, সমন্বিত ও সুসংহত পদক্ষেপ গ্রহণ। পাশাপাশি আইএলও-এর মহাপরিচালকের প্রস্তাবিত ‘গ্লোবাল কোয়ালিশন ফর সোশ্যাল জাস্টিস’ শীর্ষক বৈশ্বিক জোট গঠনের উদ্যোগে বিশ্বনেতৃবৃন্দের সমর্থন নিশ্চিত করা।
১৪ জুন সকালে শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিগণ ছাড়াও মালিক ও শ্রমিক পক্ষেও নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ঐদিন সকালে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতকালে আমি রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য ইউএনএইচসিআর-এর প্রতি আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে আমি ভাসানচরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একাংশের সাময়িক স্থানান্তর ত্বরান্বিত করতে তাদের সহায়তা চাই। আমি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য সহায়তাসহ আন্তর্জাতিক অর্থ সহায়তার পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ধরে রাখার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করি।
এরপর আমার সঙ্গে আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (একেডিএন)-এর পক্ষে প্রিন্স রহিম আগা খান সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতকালে দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে একেডিএন-এর চলমান কার্যক্রমের পাশাপাশি নার্সিং প্রশিক্ষণ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, জলবায়ু অভিযোজনসহ বিভিন্নখাতে একেডিএন-এর কর্মকান্ড সম্প্রসারণের বিষয়ে মত বিনিময় হয়।
দুপুরে সুইস কনফেডারেশনের মহামান্য রাষ্ট্রপতি অ্যালেইন বারসেটের সঙ্গে আমার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠককালে সুইস রাষ্ট্রপতি ২০১৮ সালে তাঁর বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করেন। আমি সুইস সরকারকে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পর বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই। সুইস রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় এবং এ সঙ্কট নিরসনে সুইজারল্যান্ডসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকার পালনের আহ্বান জানাই। আমাদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও সুইস কনফেডারেশনের মধ্যে জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
বিকেলে আমি জেনেভার জাতিসংঘ দপ্তরে ‘ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ার্ক সামিট ২০২৩’-এর মূল অধিবেশনে বক্তব্য প্রদান করি। আমি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গৃহীত নানা উদ্যোগের পাশাপাশি আমাদের সরকারের নেওয়া বিভিন্ন শ্রম-বান্ধব কর্মসূচি ও উদ্যোগের কথা তুলে ধরি। আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করি যে, বিশ্বের একটি বড় শিল্পোন্নত দেশ মাত্র দুইটি আইএলও মৌলিক সনদ অনুস্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ দশটি মৌলিক সনদের মধ্যে আটটিই অনুস্বাক্ষর করেছে। আমি নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি, শিশুশ্রম নিরসন, কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রতি হয়রানি বন্ধ, পরিবেশ-বান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রসার ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমাদের সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করি। সেইসঙ্গে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বৈশ্বিক জোট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে ফলপ্রসূ করতে পাঁচ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করি। আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উক্তি উদ্ধৃত করে বলি যে, একমাত্র সামাজিক ন্যায়বিচারই স্থায়ী শান্তি ও টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি রচনা করতে পারে।
একইদিন বিকেলে মাল্টার মহামান্য রাষ্ট্রপতি ড. জর্জ ভেল্লার সঙ্গে আমার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠককালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসন এবং সুনীল অর্থনীতি বিষয়ক জ্ঞানভিত্তিক খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির আলোচনা হয়।
এরপর আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ হুংবো-র সঙ্গে আমার বৈঠক হয়। আমি আইএলও মহাপরিচালককে জানাই যে, বাংলাদেশের শ্রমিকদের পক্ষে আমি নিজেই বাগেইনিং এজেন্ট  হিসেবে ভূমিকা পালন করি। এ সময় আমি আমাদের সরকারের প্রত্যেক মেয়াদে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ধারাবাহিকভাবে বাড়ানোর কথা স্মরণ করিয়ে দেই। আমরাই পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৬০০ টাকা থেকে ৮ হাজার টাকায় উন্নীত করেছি।
এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার মহামান্য রাষ্ট্রপতি সিরিল রামাফোসার সঙ্গে আমার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আমি প্রয়াত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আমাদের স্বাধীনতার পঁচিশ বছর পূর্তিতে তাঁর বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করি। প্রেসিডেন্ট রামাফোসা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও শ্রমখাতের অর্জনের প্রশংসা করেন এবং নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হওয়ায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান। আমি তাঁকে ইজওঈঝ-এর বর্তমান চেয়ার হিসেবে এ জোটে বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার আগ্রহের কথা জানাই। তিনি বলেন, আগামী আগস্টে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিতব্য ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে জোটের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। আমি তাঁকে ঢাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার দূতাবাস স্থাপনের জন্য অনুরোধ জানাই।
সন্ধ্যায় আমি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর সদর দপ্তরে আইএলও’র মহাপরিচালক কর্তৃক আয়োজিত নৈশভোজে অংশগ্রহণ করি।
১৫ই জুন সকালে কাতারের শ্রম মন্ত্রী ও এবারের আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট ড. আলী বিন সামিখ আল মারি আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতকালে তিনি কাতারে কর্মরত ৩ লাখ ৭০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশীর ভূমিকার প্রশংসা করেন। এছাড়া, তিনি কাতারে আরও বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
এরপর আমি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম-এর কার্যালয়ে আয়োজিত ‘নিউ ইকোনমি অ্যান্ড সোসাইটি ইন স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দেই। আমার বক্তব্যে আমি বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ‘রূপকল্প ২০৪১’, চতুর্থ শিল্প ডব্লিউইসি-ই বা ৪আইআর-এর পথে বাংলাদেশের প্রস্তুতি, মানসম্মত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও রূপান্তরমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় স্থানীয়ভাবে পরিচালিত বিভিন্ন অভিযোজন প্রয়াসের কথা তুলে ধরি। বাংলাদেশে একটি ৪আইআর সেন্টার স্থাপনের আহ্বান জানাই। এরপর আমি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে বৈঠক করি। বৈঠকে আমরা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক একটি ভার্চুয়াল রিয়ালিটি বিষয়ক উদ্যোগে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে একমত হই। এছাড়া, আমি ফোরামের উদ্যোগে বিশ্বজুড়ে এক ট্রিলিয়ন গাছ রোপন ও পরিচর্যার কর্মসূচিতে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার বিষয়ে নীতিগত সম্মতি জ্ঞাপন করি।
দুপুরে আমি জেনেভায় জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় নিযুক্ত বাংলাদেশ স্থায়ী প্রতিনিধি কর্তৃক আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজনে অংশগ্রহণ করি। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা প্রধানগণ এতে যোগ দেন। মত বিনিময়কালে উপস্থিত অতিথিগণ বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রায় তাদের নিজ নিজ সংস্থার কার্যক্রম বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরও সৃজনশীল ও ভবিষ্যতমুখী হওয়ার বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেন।
সন্ধ্যায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা-র মহাপরিচালক ড. এনগোজি ওকোনজো-আইওয়েলা আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতকালে বাংলাদেশের রপ্তানি বহুমুখীকরণ, গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের সক্ষমতা বৃদ্ধি, মৎস্য খাতে ভর্তুকি বিষয়ক চুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। তিনি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পরবর্তী মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের মতো উত্তরণশীল স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে একটি অনুকূল সিদ্ধান্তের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরে ঐদিন সন্ধ্যায় আমি সুইজারল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকবৃন্দ কর্তৃক আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি।
১৬ জুন ২০২৩ তারিখ সকালে আমি ঢাকার উদ্দেশ্যে জেনেভা ত্যাগ করি। বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে আমি সহযাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করি।
আমার সফরসঙ্গী হিসেবে মাননীয় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী জেনেভা সফর করেন। এছাড়া, ১১১তম আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে জেনেভা সফররত শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দুইজন মাননীয় সদস্য বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে যোগ দেন।
সামগ্রিকভাবে, ‘ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ার্ক সামিট: সোশ্যাল জাস্টিস ফর অল’ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমরা সরকারের নেতৃত্বে শ্রমখাতের সংস্কারে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে  পেরেছি। একইসঙ্গে আমরা রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে গৃহীত বিভিন্ন প্রস্তাবিত ও কার্যক্রম সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করেছি। এছাড়া, সুইস কনফেডারেশন, মাল্টা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা এসব বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ককে আরও গতিশীল করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
এর আগে গত ২২ থেকে ২৪ মে কাতারের মহামহিম আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল সানির আমন্ত্রণে ৩য় কাতার ইকোনমিক ফোরামে যোগ দিতে আমি দোহা সফর করি। এ ফোরামের মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বব্যাপী চলমান বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সরকারি নীতি নির্ধারক, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা ও সংবাদকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা ও মত বিনিময়ের মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে  বের করা।
২৩ মে সকালে আমি ৩য় কাতার ইকোনমিক ফোরামের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। একই দিনে আমি লুসাইল সিটিতে অবস্থিত কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ কমপ্লেক্স মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক, বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করি।
আমার বক্তব্যে আমি গত সাড়ে চৌদ্দ বছরে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন এবং নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরি।
দুপুরে কাতার ইকোনমিক ফোরামের সাইডলাইনে কাতারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানির সঙ্গে আমার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠককালে আমরা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করি।
এরপর রুয়ান্ডার মহামান্য রাষ্ট্রপতি পল কাগামের সঙ্গে আমার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলাপকালে তিনি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেন। আমরা সম্প্রতি সম্পাদিত এয়ার সার্ভিসেস এগ্রিমেন্ট -এর আওতায় দু’দেশের মধ্যে দ্রুত বিমান চলাচল চালু করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করি। এছাড়া দু’দেশের মধ্যে ফার্মাসিউটিক্যালস ও আইসিটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। আমি রুয়ান্ডাসহ আফ্রিকার আশেপাশের দেশগুলোতে আমাদের কৃষি গবেষণা, সম্প্রসারণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির অভিজ্ঞতার আলোকে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কনট্রাক্ট ফার্মিং-এ যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতির কথা জানাই।
একই দিনে কাতারের জ্বালানি বিষয়ক মাননীয় প্রতিমন্ত্রী সা’দ বিন শেরিদা আল কা’বি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠককালে ২০১৫ সালে সম্পাদিত দশ বছর মেয়াদী চুক্তির ধারাবাহিকতায় কাতার থেকে অব্যাহতভাবে এলএনজি আমদানির বিষয়ে আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
এরপর বিকেলে আমার সঙ্গে যৌথভাবে সৌদি আরবের মাননীয় বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ এবং অর্থনীতি ও পরিকল্পনা বিষয়ক মাননীয় মন্ত্রী ফয়সাল আল-ইবরাহিম সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সৌদি আরবের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ সম্পর্কিত বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের বিষয়ে অত্যন্ত গঠনমূলক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রসঙ্গে আমরা সৌদি বিনিয়োগের মাধ্যমে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন ও চারশ’  মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সোলার পার্ক স্থাপনের বিষয়গুলোকে ত্বরান্বিত করার বিষয়ে সম্মত হই। এছাড়া, আমি  সৌদি কর্তৃপক্ষকে পায়রা সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাই। সৌদি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, তৈরি পোশাক ও ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আগ্রহ ব্যক্ত করে। আমি সৌদি সরকার কর্তৃক দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাঁদের ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে একটি আঞ্চলিক হাব হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়টিকে স্বাগত জানাই।
২৪ মে সকালে আমি ৩য় কাতার ইকোনমিক ফোরামের মূল ইভেন্টে ব্লুমবার্গ-এর সংবাদদাতা ও উপস্থাপিকা হাসলিন্দা আমিনের সঙ্গে একটি সাক্ষাতকার পর্বে অংশ নেই। এ সময় আমি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, আইএমএফ থেকে পূর্ব-সতর্কতামূলক ঋণ গ্রহণ এবং আমাদের বন্ধুত্বভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতির আলোকে কাতার ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে জ্বালানি আমদানির সম্ভাব্যতাসহ আগামী জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ ও প্রস্তুতি সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেই। বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণের লক্ষ্যে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা চলমান রাখতে আমার সরকার যা প্রয়োজন তা করে যাবে বলে আমার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করি। আমি আরও বলেছি যে আইএমএফ-এর নির্ধারিত শর্ত পূরণ করে ঋণের অর্থ ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা আমাদের আছে বলেই আইএমএফ বাংলাদেশকে দ্রুত ঋণপ্রদানে সম্মত হয়েছে।
এরপর কাতারের মহামহিম আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানির সঙ্গে তাঁর কার্যালয় আমিরি দেওয়ানে আমার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তিনি অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আমাকে প্রবেশদ্বারে অভ্যর্থনা জানান। মহামহিম আমির কাতারের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সে দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি আমার অনুরোধে ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২ পরবর্তী সময়ে কর্মহীন হয়ে যাওয়া বাংলাদেশীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়টি দেখবেন বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া, তিনি কাতার থেকে বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে সুবিধাজনক শর্তে এলএনজি আমদানির বিষয়টিকে নিশ্চিত করার ব্যাপারে আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠককালে আমি কাতারের মহামহিম আমিরকে চলতি বছরে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ পুনর্ব্যক্ত করলে তিনি ইতিবাচক সাড়া দেন। আমি মুসলিম উম্মাহর উত্তরোত্তর উন্নতিতে কাতার সরকারকে তাঁদের সক্রিয় ও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে যাওয়ার আহ্বান জানাই।
একই দিন আমি দোহায় কাতার ফাউন্ডেশনের আওতায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য পরিচালিত বিশেষায়িত স্কুল আওসাজ একাডেমি পরিদর্শন করি। এই সংক্ষিপ্ত পরিদর্শনকালে আমি একাডেমির কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা লাভ করি এবং সেখানকার শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের শিশুদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা পৌঁছে দেই।
২৪ মে বিকেলে কাতার প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক প্রতিনিধি আমার সঙ্গে সাক্ষাত করে। ঐদিন রাতে আমি ঢাকার উদ্দেশ্যে দোহা ত্যাগ করি।
আমার সফরসঙ্গী হিসেবে মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কাতার সফর করেন।
সামগ্রিকভাবে, কাতারে আমার সাম্প্রতিক দু’টি সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও কাতারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে, যা মহামহিম আমিরের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ এবং কাতারে অনুষ্ঠিত সফল বৈঠকসমূহের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে।
আমি আমার লিখিত বক্তব্য শেষ করছি। এ বিষয়ে আপনাদের প্রশ্ন করার জন্য অনুরোধ করছি।
খোদা হাফেজ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 4102
  • Total Visits: 712770
  • Total Visitors: 2
  • Total Countries: 1125

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শুক্রবার, ১০ই মে, ২০২৪ ইং
  • ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ১লা জ্বিলকদ, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, ভোর ৪:২২

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018